মুক্তির দিশারী

মুক্তচিন্তার পথ প্রশস্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।

দর্শন ধর্ম ধর্মনিরপেক্ষতা ফিকার্ড বিজ্ঞান

সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি হয়েছে?

ভূমিকা

আস্তিকদের অধিকাংশই বলা যায় বিশ্বাস করেন, নাস্তিকরা সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস করে। তারা ধরেই নেন যে, যেহেতু নাস্তিকরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, সেহেতু তারা সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস করে। নাস্তিকদের ব্যাপারে আস্তিকদের এই ধারণা কতটুকু সত্য? সত্যিই কি নাস্তিকরা এমনটা বিশ্বাস করে? না, নাস্তিকরা এমনটা বিশ্বাস করে না। নাস্তিক হওয়ার জন্য কারো এমনটা বিশ্বাস করার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা নাস্তিকতা বা নাস্তিকদের নিয়ে একটি ভুল ধারণা ছাড়া কিছুই না। নাস্তিকদের নিয়ে আস্তিকদের এই বহুল প্রচলিত ভুল ধারণাটি কেনো ভুল, সেটা তুলে ধরাই এই প্রবন্ধটির উদ্দেশ্য।

মূল আলোচনা

আমরা যারা নাস্তিক তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি না। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা মানে সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস করা নয়। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করার জন্য সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস করা জরুরী নয়।

স্ট্রম্যান

আস্তিকরা প্রচার করে বেড়ান, নাস্তিকরা সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস করে, যা স্ট্রম্যান ফ্যালাসির একটি সুন্দর উদাহরণ।

স্ট্রম্যান ফ্যালাসি কি? এটা এক প্রকার কুযুক্তি, আর এই কুযুক্তিটা তখনই হয় যখন কেউ কারো বক্তব্য ভুল প্রমাণের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য বাড়িয়ে বলেন বা ভুলভাবে উপস্থাপন করেন বা তিনি যা বলেননি তা-ই তিনি বলেছেন বলে দাবি করেন।

নাস্তিকরা সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস করে বলাটা নাস্তিকরা যা বলে না তা-ই জোর করে নাস্তিকদের মুখে বসিয়ে নাস্তিকদের বোকা প্রমাণের চেষ্টা ছাড়া কিছুই না।

ব্ল্যাক অর হোয়াইট

আস্তিকরা ধরেই নেন যে, ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করার মানেই সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস করা। ‘ঈশ্বর’ এবং ‘দূর্ঘটনা’ কেবল এই দুটি সম্ভাবনা ছাড়াও আরও কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা সেটা তারা এড়িয়ে যান, যা ব্ল্যাক অর হোয়াইট ফ্যালাসির একটি সুন্দর উদাহরণ।

ব্ল্যাক অর হোয়াইট ফ্যালাসি কি? এটা এক প্রকার কুযুক্তি, আর এই কুযুক্তিটা তখনই হয় যখন কেউ কেবল দুটি সম্ভাবনা থেকেই একটি সম্ভাবনা বেছে নেওয়ার আহবান করে, আরও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও।

ধরুন, আমি বললাম, হয় ২ + ২ = ৩, নাহয় ২ + ২ = ৫। তারপর আমি বললাম, যেহেতু ২ + ২ = ৩ নয়, সেহেতু ২ + ২ = ৫। সমস্যাটি বুঝতে পেরেছেন? ২ + ২ = ৩ ভুল হলেই ২ + ২ = ৫ সঠিক হয়ে যায় না। আবার, ২ + ২ = ৫ ভুল হলেই ২ + ২ = ৩ সঠিক হয়ে যায় না। কেননা, দুই ও দুইয়ের যোগফল ‘তিন’ এবং ‘পাঁচ’ ছাড়াও অন্য কিছু হতে পারে।

একইভাবে, সবকিছু ঈশ্বরের অবদান না হওয়ার মানে এটা নয় যে সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি। আবার, সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি না হওয়ার মানে এটা নয় যে সবকিছু ঈশ্বরের অবদান। কেননা, সবকিছু ‘ঈশ্বরের অবদান’ এবং ‘দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি’ ছাড়াও অন্য কিছু হতে পারে।

আস্তিকদের ধারণা, মহাবিশ্ব বা প্রাণের দূর্ঘটনার ফলাফল হওয়াটা লটারি জেতার মতোই একটি অপ্রত্যাশিত ফলাফল। অতএব, মহাবিশ্ব বা প্রাণের উদ্ভবের পেছনে অবশ্যই কোনো অতিপ্রাকৃতিক সত্ত্বার অবদান রয়েছে।

‘ঈশ্বর’ এবং ‘দূর্ঘটনা’ ছাড়াও একটি সম্ভাবনা রয়েছে আর সেটা হচ্ছে ‘প্রত্যাশিত ফলাফল’।

বৃষ্টি হলে পথঘাট ভিজে যায়, বৃষ্টির ফলে এই পথঘাট ভিজে যাওয়াটা একটি প্রত্যাশিত ফলাফল। কেননা, বৃষ্টি হলে পথঘাট ভিজবেই। যতবারই বৃষ্টি হবে ততবারই পথঘাট ভিজবে।

আমরা এখনো মহাবিশ্বের অনেক ঘটনার পেছনের রহস্য জানি না, হয়তো কখনোই জানতে পারবো না। তাই বলে এটা ধরে নেওয়ার প্রয়োজন নেই যে, এসব কোনো অলৌকিক সত্ত্বার অবদান। এটা ধরে নেওয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই যে, এসব দূর্ঘটনার ফলাফল। এসব ঘটনা বৃষ্টি হওয়ার কারণে পথঘাট ভিজে যাওয়ার মতোই প্রত্যাশিত ফলাফল হতে পারে।

প্রাণের সূচনা বা মহাবিশ্বের উদ্ভবও বৃষ্টি হওয়ার কারণে পথঘাট ভিজে যাওয়ার মতো পূর্ববর্তী ঘটনা বা ঘটনাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রত্যাশিত ফলাফল হতে পারে।

অতএব, পরিষ্কারভাবেই একজন নাস্তিক হওয়ার জন্য সবকিছু দূর্ঘটনাবশতঃ সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই।

উপসংহার

নাস্তিকরা বলে না যে, সবকিছু দূর্ঘটনার ফলাফল। একজন নাস্তিক হওয়ার জন্য এমনটা বিশ্বাসেরও কোনো প্রয়োজনও নেই। আস্তিকরা ‘ঈশ্বর’ এবং ‘দূর্ঘটনা’ ছাড়াও যে একটি সম্ভাবনা রয়েছে সেটা হয় বুঝতে পারেন না, নাহয় বুঝেও নাস্তিকদের বোকা প্রমাণের অসৎ চেষ্টা করেন।

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *