মুক্তির দিশারী

মুক্তচিন্তার পথ প্রশস্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।

দর্শন ধর্ম রাজনীতি

বহুত্ববাদ কি আদৌ অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান গাইবে?

লিখিত সংবিধান ছাড়া যুক্তরাজ্য চলছে, নিউজিল্যান্ড চলছে, কানাডা চলছে। বাংলাদেশ কী এমন কী হয়ে গেল যে সংবিধান ছাড়া চলছিল না?সংবিধান থাকার মানেটা কী? কবে এই দেশ সংবিধানের কী মেনেছে শুনি! সংবিধানের মূল নীতি ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা। এই দেশ গণতন্ত্র মেনেছে? মানেনি। গণতন্ত্র মানে তো শুধু ভোটাভুটি নয়, সকলের সমান অধিকারের নামও গণতন্ত্র। নারীর অধিকার তো পারিবারিক আইনে পুরুষের অধিকারের সমান ছিল না। নারী বঞ্চিত হয়েছে। কাউকে যদি ধর্মীয় আইন এনে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে গণতন্ত্র বলতে সংবিধানে কিছু থাকা আর না-থাকা সমান কথা।

সমাজতন্ত্র কি মানা হয়েছে? ধনী আর দরিদ্রের মধ্যে ছিল বিরাট ব্যবধান । এই ব্যবধান ঘোচানোর কোনও চেষ্টা কি হয়েছে? হয়নি। যতখানিই শিল্প-বিপ্লব ঘটেছে, এতে ধনীকে আরও ধনী করা হয়েছে, দরিদ্রকে আরও দরিদ্র।

জাতীয়তাবাদেরই বা কী ছিল? চুরি -ডাকাতি -লুটপাট- অর্থ পাচার- খুন- ধর্ষণ -প্রতারণায় দেশের লোক ব্যস্ত থেকেছে, এইসবে জাতির কী উন্নতি হয়, দেশেরই বা কী লাভ হয়?

ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল সংবিধানে, তাই বলে সব ধর্মকে কোনওদিন সমান চোখে দেখা হয়েছে? মুসলমানের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে রায় দিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানের ধর্মকে তুচ্ছ করা হয়নি? হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষকে নির্যাতন করা হয়নি? হয়েছে।

নতুন সংবিধানে বহুত্ববাদ ঠাঁই পেয়েছে। এই বহুত্ববাদ কি আদৌ অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান গাইবে? ভিন্ন রাজনৈতিক এবং দার্শনিক মতবাদকে নিরাপত্তা দেবে? মত প্রকাশের অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে, সম্মান করবে?। তাহলে কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে না? কোনও নাস্তিকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলা হবে না? এই গ্যারিন্টি কে দেবে?

আসলে বাংলাদেশের জন্য দরকার সেক্যুলারিজম, যার আক্ষরিক অর্থ ধর্মহীনতা। সভ্য হতে চাইলে রাষ্ট্রকে আর আইনকে ধর্মহীন হতেই হবে। রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করতেই হবে। সভ্য হওয়ার প্রথম শর্ত এটিই। ধর্ম মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যপার। সমাজে সব রকম মানুষ থাকবে, কেউ ধর্মে বিশ্বাস করবে, কেউ করবে না। ধর্মে বিশ্বাসীর স্থান অবিশ্বাসীর ওপরে রাখা হবে না। ধর্মের প্রচার এবং ধর্মের আরোপ–কোনওটিকেই গ্রহণ করা হবে না। অচিরে এইসব ব্যবস্থা না নিলে দেশটি পেছনে যেতে যেতে Dark Ages-এ নির্ঘাত ঢুকে যাবে। তখন কিন্তু শত শত বছর আলো ফেলেও দেশটিকে আলোকিত করা সম্ভব হবে না।

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *